২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

এএসআই শরিফুল’র অবৈধ সম্পদের পাহাড়

1 min read

নিজস্ব প্রতিবেদক :

শুনেছি লটারীর টাকা পেয়ে মানুষের ভাগ্য বদলে যায়। এখন দেখছি পুলিশের চাকরী পেলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এমনি রহস্যময় ঘটনা ঘটিয়েছে, শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলা মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চৈতাজানি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে এএসআই শরিফুল ইসলাম। কনেস্টবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি যেন ভাগ্য বদলে দিলো শরিফুল ইসলামের। পুলিশের এএসআই পদে চাকুরি করে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৬ বছরে রহস্যজনক ভাবে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিভাবে অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হলেন দূর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য, মর্মে এলাকাবাসীর দাবী।

অনুসন্ধানে জানাযায়, ঝিনাইগাতী উপজেলা মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চৈতাজানি গ্রামের হত-দরিদ্র মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে এএসআই শরিফুল ইসলাম কিভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হলেন এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন-২০০৪এর ২৭(১১) ধারায় শেরপুরের সিনিয়র স্পেশাল জেলা দায়রা জজ আদালতে সদর উপজেলার ডা: এ.এফ.এম হেজবুল বারি খাঁন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। যাহার পিটিশন নং- ১/২০২৩। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ১৫কার্য দিবসের মধ্যে অভিযোগকারীকে অভিযোগে আনিত সকল প্রমাণাধি উপ পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, জামালপুরে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করেন, বিচারক মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ। উক্ত মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, জামালপুর।

আদালতের মামলা সুত্রে জানাযায়, ঝিনাইগাতী উপজেলা মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চৈতাজানি গ্রামের হত-দরিদ্র মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে শরিফুল ইসলাম ২০০০ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে “পুলিশ কনস্টেবল” পদে যোগদান করেন। এর কয়েক বছর পর তিনি এএসআই পদে পদোন্নতি লাভ করেন, পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেড কোয়াটারে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সাবেক এক অতিরিক্ত ডিআইজি’র গানম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকেই এই এএসআই শরিফুল ইসলামের আঙ্গুল ফোলে কলাগাছ হওয়া শুরু হয়।

আদালতের মামলা ও সরেজমিন অনুসন্ধানে জানাযায়, এএসআই শরিফুল ইসলাম ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৬ বছরেই তিনি শেরপুর পৌর শহরের কাজি বাড়ী পুকুরপাড় এলাকায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেছেন ৫ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক একটি বাড়ী। শুধু তাই নয়, একই সময়ে তিনি ঝিনাইগাতী ও শেরপুরে ক্রয় করেছেন, ১কোটি ১৭ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকার জমি। যাহার দলিল নং ৩২৫২, তারিখ- ২৭ ফেব্রুয়ারি-২০১৩, সাব রেজি- শেরপুর, জমির পরিমাণ সোয়া তিন শতাংশ, মুল্য- ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, দলিল নং- ৯২১, তারিখ- ২৩/৩/২০১৬, জমির পরিমাণ- দেড় শাতাংশ, মুল্য- ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, দলিল নং- ২৯০১, তারিখ- ১৮/১০/২০১৭, জমির পরিমাণ – ৯৭ শতাংশ, মুল্য- ৩২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা, দলিল নং- ২৯০৭, তারিখ- ১৮/১০/২০১৭, জমির পরিমাণ – ২৫ শতাংশ, মুল্য- ৭ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা, দলিল নং- ১৬৮৩, তারিখ- ৫/৭/২০১৮, জমির পরিমাণ – ১ একর ৩০ শতাংশ, মুল্য- ৪৭ লক্ষ টাকা, দলিল নং- ১৫২৫৬, তারিখ- ১৭/১১/২০১৬, জমির পরিমাণ – সাড়ে তিন শতাংশ, মুল্য- ২১ লক্ষ টাকা। এছাড়াও নানা বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে রয়েছে তার অঢেল সম্পদ। একজন পুলিশের এএসআই’র এতো অল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক কিভাবে হলো- বুঝতে পারছেনা এলাকাবাসী। এলাকার সকলেই হতবাক এই পরিবারটিকে দেখে। যে পরিবারটি পুলিশে চাকুরি হওয়ার আগে নুন আনতে পান্তা ফোরাতো।

চৈতাজানি গ্রামের বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, মান্নানের এক সময়ে ঠিক মতন চুলা জ্বলতো না তার ছেলে পুলিশে চাকরী পাওয়ার পর রাতারাতি বদলে যায় তাদের ভাগ্যের চাকা।

কুদ্দুস শেখ(ছদ্মনাম)নামে এক ব্যক্তির জানান, পুলিশের চাকরি পেয়ে প্রথমতো এমন ঠাকা পয়সার গরম ছিলোনা। তবে পুলিশের এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে এত অল্প সময়ে কিভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তা কোনভাবেই বুঝতে পারছিনা আমরা। এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন মাত্র কয়েক বছরে। দূর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসেব দেখলেই তার অবৈধ টাকার উৎস বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

একই এলাকার মুদি দোকানদার নাম না প্রকাশ শর্তে জানান, সদর আলী এক সময়ে কৃষিকাজ করতেন তেমন ভালো জামা কাপড় পরার সক্ষমতাও ছিলোনা। তার ছেলে হঠাৎ এতো টাকার মালিক হওয়া সত্যি রহস্যজনক। তার ছোট ভাই রফিকুল, এলাকায় বড়ভাই পুলিশের এএসআই এর নাম ভাঙ্গিয়ে দাবরিয়ে বেড়াচেছন তার পরিবারে সদস্যরাও সাধারণ মানুষকে হুমকি ধুমকি দিয়ে থাকেন। তারা দাম্ভিকতার সাথে বলেন, তাদের পুলিশ অফিসার রয়েছে। বেশী বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে এএসআই শরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি বর্তমানে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে এএসআই (ক্রাইম ডিভিশন) পদে কর্মরত আছি। আমার বিরুদ্ধে আনিত আভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। হেজবুল বারি আমার বাড়ির সামনে থেকে একটি ড্রেন নিতে চাইলে সেটি দিতে অস্বিকার করলে। তখন থেকে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আসছে। সর্বশেষ এখন আদালতে মামলা করছে,বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দুদককে দিয়েছেন। যা তনন্তনাধীন আছে।

আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী ডা: এ.এফ.এম হেজবুল বারি খাঁন জানান, যেহেতু আমি ওই পুলিশের মুখোশ উন্মোচনের জন্যে মামলা করেছি, সেহেতু আমি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।

জামালপুর দুদকের সমন্বিত কার্যালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা মলয় কুমার শাহা জানান, মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

সিআইডি প্রধান কার্যালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, অন ডিউটিতে এই নামে কেউ নাই, রিজার্বফোর্সে আছেকিনা সেটি এই মুহূর্তে জানা নাই।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »