২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

দেবিদ্বারে শহীদ রুবেল হত্যার মামলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন; বিক্ষোভ মিছিল

1 min read

ছবি : সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন নিহত রুবেলের মা ও মামলার বাদী হাসনে আরা বেগম (বায়ে) এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী মাসুদ হাসান (ডানে)।

মেহেদী হাসান রিয়াদ :

* হত্যাকারীদের বাঁচাতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পরিবারের  * মামলা না করে কালক্ষেপন করছিলো পরিবার; দাবী বিএনপি নেতাদের

২৪ আগস্ট, শনিবার বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের নিজ বাড়িতে নিহত রুবেলের পরিবারের আয়োজনে তাঁর মা হাসনে আরা বেগম এবং পরে সন্ধ্যায় পৌর নিউ মার্কেটের একটি কমিউনিটি সেন্টারে দেবিদ্বার উপজেলা, পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে আরেকটি পাল্টা সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল(৩৩) হত্যা মামলায় প্রকৃত খুনিদের নাম দেওয়া, বাদ দেওয়ার অভিযোগে পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে গত ৪ আগস্ট কুমিল্লা দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩) নিহত হন। তিনি পেশায় একজন বাস চালক এবং দেবিদ্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে নিহত রুবেলের মা ও মামলার বাদী হাসনে আরা বেগম বলেন- স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমার ছেলে রুবেল শহীদ হয়েছে। তবে, রুবেলের খুনিদের বাঁচাতে স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ গভীরভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আমার সন্তানকে কারা গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া সেদিনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী দেবিদ্বারের ছাত্র-জনতা। আমার ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে খুনিদের বিরুদ্ধে আমরা পারিবারিক ভাবে মামলা করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সীর আপন ভাতিজা আওয়ামী লীগের সাবেক দুই বারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও তার একান্ত ক্যাডার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ আরো কয়েকজন হত্যাকারী মূল আসামীদের বাঁচাতে তারেক মুন্সী আমার পায়ে ধরে এবং বড় অংকের টাকার অফার দেয়। পরে তার (তারেক মুন্সীর) অনুসারী আবুল কাশেম, পিতা- রেনু মিয়া নামের একজনকে বাদী করে আমার ছেলে নিহত রুবেল এর চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে গত ২০ আগস্ট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। শুধু তাই নয়, আমি যেন মামলা করতে না পারি সে জন্য তারা বিভিন্নভাবে হুমমি ভয় ও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা করেছে। তবে ওই দিন রাতে দেবিদ্বার থানায় আমি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। আল্লাহর রহমতে অনেক নাটকীয়তার পর আমার দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি দেবিদ্বার থানায় রুজু হয়েছে, যার মামলা নাম্বার ১৪৭/২৪, তারিখ- ২০/০৮/২০২৪ইং। আর আদালতে মামলার বাদী কাশেম আমাদের পারিবারের কেউ না, তাকে আমরা চিনিও না। আমার ছেলের হত্যা মামলা নিয়ে যে ঘৃণ্য চক্রান্ত হয়ে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট উপদেষ্টাসহ দেশবাসীর কাছে একটাই দাবী, আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের সকলের যেন ফাঁসি নিশ্চিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন নিহত রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার, চাচা মো. আবু তাহের, ইউনুছ মিয়া ও ফুফাতো ভাই রবিউল হাসান।

অপর দিকে দেবিদ্বার উপজেলা, পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনে দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী মাসুদ হাসান- বৈষম্যবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল(৩৩) হত্যা মামলায় প্রকৃত খুনিদের নাম দেওয়া, বাদ দেওয়ার অভিযোগ এনে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সীর বিরুদ্ধে মিথ্য, ষড়যন্ত্র মুলক ও বানোয়াট সংবাদ সম্মেলনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে নিহত রুবেলের পরিবারের কাছে কু-রুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানিয়েছেন।

এসময় কাজী মাসুদ হাসান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ এর সন্ত্রাস বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন পৌর স্বেচ্ছাসেবকদল সহ-সভাপিত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল। রুবেল নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে গত ২০ আগস্ট জাতীয়তাবাদী পরিবারের পক্ষ থেকে পৌর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ আবুল কাশেম নিজ উদ্দ্যোগে বাদী হয়ে কুমিল্লা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪নং আমলী আদালতে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। যার মামলা নাম্বার- জিআর ১৪৬/২৪ এবং সিআর ৬৩৯/২৪, তারিখ- ২০/০৮/২০২৪ইং।

কাজী মাসুদ বলেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে ওই মামলায় আসামী করা হয়নি বলে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ করেন নিহত রুবেলের পরিবার। যা সম্পূর্ন মিথ্যা। আদালতে দায়েরকৃত মামলায় ৪৫ নাম্বার আসামী করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রুবেল হত্যার মামলা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে নিহতের চাচার সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি আজ-কাল, করবো-করতেছি বলে কালক্ষেপন করতে থাকেন। সেদিন যদি আবুল কাশেম বাদী হয়ে মামলা না করতেন তাহলে রুবেলের পরিবার মামলা করতো কিনা তা নিয়ে আমাদের সন্ধেহ হয়। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আস্তাভাজন একজন বক্তব্য রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাংবাদিক সম্মেলন শেষে নিউ মার্কেট চত্ত্বর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ গিয়াস উদ্দিন, আলিম পাঠান, ভিপি শাহীন, ভিপি মাহফুজ, নুরুজ্জামান, শাহ্ জামান, মফিজ উদ্দিন সহ দেবিদ্বার উপজেলা, পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »