দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
দেবীদ্বার উপজেলার ৪৫০টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার মধ্যে ৩২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার বা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নেই।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি, সদস্যদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ফলে এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে গভীরভাবে জানার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি শহীদ মিনারের অভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও পারছেনা। যারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, তারা রঙ্গীণ কাগজের মলাট, কলাগাছ, মাটি, ইট বা বাঁেশর কঞ্চি দিয়ে তৈরী শহীদ মিনার তৈরী করেই শ্রদ্ধা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেবীদ্বার উপজেলায় ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২২টি, ১৬৭টি কেজি স্কুলের ১৬৭টি, ৩১টি কামিল, ফাজিল ও আলিম মাদ্রাসার মধ্যে ২৬টি, ৫১টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬টি এবং ১ টি সরকারি কলেজ ও ১৫টি বেসরকারি কলেজের ৫টিসহ ৩২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই। ৪৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
অবসনপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক আলী হোসেন জানান, ৫২’র ভাষা আন্দোলনের পর দেবীদ্বার কিছু পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছোট আকৃতির শহীদ মিনার ছিল। ভাষা সংগ্রামের ১৮ বছর পর ১৯৭০ সালে দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজে এক পিলার বিশিষ্ট প্রথম একটি শহীদ মিনার প্রতিষ্টা করা হয়। যে শহীদ মিনারটিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে সভা সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিল। পরবর্তীতে ৮০’র দশকে কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাকীগুলো ২০১৬ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মো. নজরুল ইসলাম নামে এক অভিবাবক ক্ষোভের সাথে বলেন, ভাষা নিয়ে আমরা এতো গর্ব করি, মাতৃভাষা রক্ষার জন্য একমাত্র রক্তদেয়ার ইতিহাস বাঙ্গালীদের রয়েছে, যার স্বীকৃতি স্বরুপ ২১ ফেব্রæয়ারী আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ^ আজ এ দিবসটি পালন করে আসছে। অথচ ভাষা দিবসের ৭২ বছর পরও দেবীদ্বারের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই।
দেবীদ্বার মফিজ উদ্দিন মডেল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান জানান, ২০২৩ সালের ১০ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), বিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমার বিদ্যালয়ের বহুতল নতুন ভবন নির্মাণের কারনে শহীদ মিনারটি ভাঙ্গা হয়েছে, খুব দ্রæত শহীদ সিনার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম তালুকদার জানান, উপজেলার ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নূরপুর এবং মফিজ উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকালে ভাঙ্গা শহীদ মিনারগুলো দ্রæত নির্মাণ করা হবে, রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্ধ অনুমোদন হয়েছে। বাকী ফতেহাবাদ কারিগরী, চুলাশ ও অক্সফোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৩টি বিদ্যালয়ের শহীদ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হবে। এছাড়া ৩১টি মাদ্রাসার মধ্যে ২৬টি এবং ১ টি সরকারি কলেজসহ ১৫টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে ৫টিতে শহীদ মিনার নেই।
এ ব্যপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন জানান, আমাদের ১৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২২টিতে শহীদ মিনার নেই, তাছাড়া ১৬৭টি কেজি স্কুলের ১টিতেও শহীদ মিনার নেই। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোন বরাদ্ধ নেই। যে ৬৩টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে তা ৩ ধাপে অর্থাৎ ব্যাক্তি উদ্যোগে, এলাকাবাসীর উদ্যোগে এবং ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে করা হয়েছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান রিয়াদ
প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, সাধারণ বীমা ভবন, দিলকুশা বা/এ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
হট লাইনঃ +880 1568 945 305