৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাগাভাগি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব!

1 min read

মেহেদী হাসান রিয়াদ, দেবিদ্বার থেকে ফিরে :

কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারিদের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। আর সেসব দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্তারা প্রতিবাদ তো দূরের কথা, বরং নিজেরাই অর্থ ভাগাভাগি করে নিরব থাকারও মিলেছে অভিযোগ।

* দায়িত্বশীল কর্তার অদৃশ্য অবহেলা
* সেবা বাড়ার সাথে বাড়ছে অনিয়ম আর দুর্নীতি
* ইসিজি থেকেই আত্মসাৎ হয় বছরে ১,৯৩,১৩০ টাকা
* পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভেদে ভিন্ন আত্মসাতের পরিমাণ
* আত্মসাৎকৃত টাকার ভাগ পায় পুরো কর্তৃপক্ষ

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, নরমাল ডেলিভারি সেবা, এ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং সাপে কাটা রোগীকে এন্টি ভেনম সহ ইসিজি বিভাগের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে।

এদিকে বহিঃবিভাগে আসা রোগী, জরুরি বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্যাথলজি, এক্স-রে এবং ইসিজি বিভাগে যায়। আর সেখানে থাকা টেকনিশিয়ান সহ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত ‘ফি’ সংগ্রহ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও এখানেই দেখা যায় ভিন্নচিত্র। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে টেস্ট করার পর রোগীদের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত ‘ফি’ এর অধিক অর্থ আদায় করছে তারা। এছাড়া হাসপাতালের রশিদ না দিয়ে নগদ অর্থের মাধ্যমে রোগীদের পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করছে সরকারি টাকা।

সরেজমিনে ইসিজি বিভাগের টেকনিশিয়ান (এমটিসি) শামীন হাসান ও প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব এটেন্ডেন্ট হাবিবুর রহমানকে ওই অনিয়মের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকতে দেখা গেলেও অভিযোগ রয়েছে, দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগ নয়, সকল বিভাগেই অভিনব কৌশলে অবৈধপন্থায় সরকারের টাকা আত্মসাৎ করছে দায়িত্বরত কর্মচারিরা।

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে সুলতানা বেগম নামে একজন চাকুরিজীবি অভিযোগ করে বলেন, আমি ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার সহ নানা রোগের চিকিৎসা নিতে প্রথমে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে সরকারি ‘ফি’ দিয়ে রিসিপ্ট সংগ্রহ করে ১০৩ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাই। সেখান থেকে আমাকে ইসিজি করার জন্য বলা হয়। পরে একজন নার্স ইসিজি শেষে ১০০ টাকা ফি দিতে বললে আমি তাকে ওই টাকার রশিদ দিতে বলি। ইসিজি’র জন্য কোনো রশিদ বা ভাউচারের প্রয়োজন হয় না এবং হাসপাতালের কোনো রশিদ তাদের কাছে নেই বলেও জানায় নার্স। তবে আমার ছোট ছেলে পাশ থেকে জানায়, সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত ইসিজি ফি ৮০ টাকা।

পরে আরবিএস করার জন্য প্যাথলজি বিভাগে গেলে ৬০ টাকা ফি নেওয়া হলে প্রথমে সেখান থেকেও রশিদ দিতে চায়নি ল্যাব এটেন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান। পরে কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে রশিদ দেয় এবং সময়ের স্বল্পতা দেখিয়ে আজ রিপোর্ট দিতে পারবে না বলে জানায়।

ঘটনার সত্যতা জানতে ওই নার্স এর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সে বিল-ভাউচার ছাড়া ১০০ টাকা করে ইসিজি করে থাকেন। কে এই কর্তৃপক্ষ? প্রশ্নের জবাবে প্রথমে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং পরে ইসিজি বিভাগের টেকনিশিয়ান শামীন হাসান এর নাম বলেন। তিনি আরও বলেন, শামীন ভাই ইসিজি বিভাগে কাজ না করে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে সে নিয়মিত প্যাথলজিতে বসে। তার কথা মতোই আমরা রোগীদের কাছ থেকে ফি আদায় করি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।

নার্স এর তথ্যমতে খোঁজ করা হয় ইসিজি বিভাগের টেকনিশিয়ান শামীন হাসানের। প্রথমে না পাওয়া গেলেও নার্সদের একাধিক মোবাইল কলে অনেক সময় পর সে একটি রশিদ বই আর রেজিস্টার খাতা নিয়ে হাজির হয় ইসিজি বিভাগের সামনে। এতোক্ষন কোথায় ছিলো এবং ওনার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও ওই নার্সকে কেন ইসিজি করতে হলো? কারণ জানতে চাইলে শামীন হাসান বলেন, যদিও ইসিজি বিভাগের টেকনিশিয়ান হিসেবে দায়িত্বে আছি, প্রকৃতপক্ষে আমি একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান। যে কারনে টিএস স্যার আমাকে ল্যাব এ কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বেশির ভাগ সময় প্যাথলজিতেই কাজ করি।

ইসিজি’র সরকরি ফি কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০ টাকা। পরে সরকারি চার্ট দেখতে চাইলে আমতা-আমতা করে বলেন, আসলে ফি ৮০ টাকা করেই। আমাদের টিস্যু এবং ইসিজি পেপার সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হয় বিধায় অতিরিক্ত ২০ টাকা করে নেই। বিষয়টি টিএস স্যার অবগত আছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএস) বলেন, ইসিজি’র নির্ধারিত ফি ৮০ টাকা হলেও বিভিন্ন কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় হয়। সরকারি ভাবে নির্ধারিত ফি ধার্য্য করার পরও কি কারণ থাকতে পারে, যাতে করে রোগীদের থেকে তা আদায় করতে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের হাসপাতালে ইসিজি সহ তাৎক্ষনিক সেবাগুলো যেন সর্বক্ষণ চালু থাকে। অনেক সময় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ইসিজি পেপার থাকে না, টিস্যু থাকে না। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকনিশিয়ানরা রোগীদের যেন ফেরত না পাঠায়, রোগীরা বাইরের কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না গিয়ে হাসপাতালেই সেবা পায় তার জন্যই মাঝে মধ্যে ২০ টাকা বেশি নিয়ে অর্থাৎ ১০০ টাকা নিয়ে তাদের সেবা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব এটেন্ডেন্ট হাবিবুর রহমানের সাথে পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদকের কথা চলাকালীন আন্তঃ বিভাগে ভর্তী থাকা এক রোগীর আত্মীয় আসেন রিপোর্ট নেওয়ার জন্য। ওই আত্মীয়টি হাবিবুর রহমানের হাতে কাগজের কিছু একটা গুজে দিয়ে রিপোর্ট রেডি হয়েছে কিনা জানতে চান। পরে দেখা যায়, হাবিবুর রহমানের হাতে দেওয়া কাগজটিতে চিরকুট আকারে লিখা রয়েছে “শিউলী- ৩০০ // আরবিএস // ডা. কবির”।

এসময় গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে ল্যাব এটেন্ডেন্ট হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, চিরকুটের মাধ্যমে যে টেস্ট করা হয়েছে তা হাসপাতালের কোনো রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত হয়েছে কিনা? কিংবা এর ফি বাবদ নেওয়া অর্থের কোনো রশিদ দেওয়া হয়েছে কিনা? উত্তরে হাবিবুর রহমান জানান, এ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাই তাকে রশিদ দিয়ে ফি আদায় করা হয়নি। কিন্তু রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত আছে কিনা দেখতে চাইলে প্রতিবেদকের কাছ থেকে চিরকুটটি কেড়ে নিয়ে রেজিস্টারে রোগীর বিবরণ লেখার চেষ্টা চালান তিনি। পরে প্রতিবেদক চিরকুটটি তার হাতে না দিয়ে ওই টেস্ট বাবদ যে অর্থ নেওয়া হয়েছে সে টাকা কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব কিছু অবগত, এটা তারাই বুঝবেন বলে জানান। পরে তিনি মোবাইল ফোনে কাউকে জানায়, একজন সাংবাদিক প্যাথলজি বিভাগে এসে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে, সে যেন তাড়াতাড়ি ওই রুমে উপস্থিত হয়।

এদিকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেকনিশিয়ানরা কিভাবে এবং কতো টাকা অবৈধ ভাবে আত্মসাৎ করছে ওই বিষয়ে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, শামীন হাসান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে ইসিজি বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে দায়িত্ব পাওয়ার পর পূর্ব থেকে চলমান অবৈধপন্থায় অভিনব কায়দা যুক্ত করে শুরু করেন অর্থ আত্মসাৎ এর নতুন পদযাত্রা।

প্রতিদিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যত লোক আসে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পরীক্ষা ভেদে প্যাথলজি বিভাগে তিনি নিজে এবং ল্যাব এটেন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান এর সহায়তায় আর ইসিজি বিভাগে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সদের মাধ্যমে ১ শত টাকা থেকে শুরু করে ৫শত টাকা নিয়ে একটি চিরকুটের মাঝে নাম লিখে রোগীকে দেন। পরে সে চিরকুট অনুযায়ী নাম দেখে রোগীর রিপোর্ট প্রদান করেন। এর মাঝে কেউ যদি টেস্টের রশিদ চায় তাহলে সরকারি হাসপাতালে কোনো রশিদ/ভাউচার প্রয়োজন নেই। এগুলো সরকারি নির্ধারিত ‘ফি’ বলে জানিয়ে দেয় তারা।

যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত ‘ফি’ সংগ্রহ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে, তাই নাম মাত্র রোগীর বিবরণ রেজিষ্টার খাতায় লিখে রেখে পরে একান্ত ভাগে রশিদ তৈরি করে তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে জমা দেওয়া হয়।

এভাবে টেকনিশিয়ান শামীন হাসান গত ২৭ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত একদিনও ইসিজি বিভাগে কাজ না করে (১৩০০১-১৩১০০) রিসিভ বইয়ে ৫৬ টি ইসিজি টেস্টের রশিদ তৈরি করেছেন। আর ওই রশিদ গুলোর শুধু মাত্র অফিস কপিতে গ্রাহকের নাম এবং টাকার পরিমাণ ৮০ টাকা লিখে রেখেছেন। ৫৬ টি রশিদের একটিতেও গ্রাহক কপিতে কোনো কিছুই লিখা হয়নি কিংবা গ্রাহককে দেওয়া হয়নি।

সূত্র মতে, এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ টি ইসিজি করানো হয়। সে হিসেবে গেলো ১৭ দিনে ১শ ৭০টি ইসিজি’র সরকারি ফি দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৬ শত টাকা। কিন্তু, রশিদ বই থেকে ৫৬টি ইসিজি’র ফি বাবদ ৪ হাজার ৪শত ৮০ টাকার হিসেব মিলেছে। অর্থাৎ শুধু মাত্র ১৭ দিনে সরকারি নির্ধারিত ফি থেকেই আত্মসাৎ করা হয়েছে ৯ হাজার ১শত ২০ টাকা। তাহলে প্রতি মাসে ১৬ হাজার ৯৫ টাকা এবং বছরে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ১শত ৩০ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি কোষাগার। এর বাইরে রোগী ভেদে অবৈধ অর্থ আদায় তো আছেই।

এতো গেলো শুধু ইসিজি বিভাগের হিসাব। এমন ভাবে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ আর অনিয়ম তো ধারাবাহিক কর্মকান্ডের অংশ মাত্র।

এছাড়া দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ সেবা দিতে ফার্মাসিস্ট এর গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) অনুযায়ী সরকারি ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও সঠিকভাবে তা বিতরণ করা হচ্ছে না। বিশেষ করে যে সকল ওষুধে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ। ক্রয়-বিক্রয় আইনতঃ দণ্ডনীয়’ এমন লেখার সিল নেই সেসব ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বাইরের দোকানগুলোতে বিক্রি করে অবৈধ ভাবে সরকারের অর্থ লুটছে চক্রটি। অনেক সময় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ না থাকলেও ওয়ার্ড রেজিস্ট্রারে দামি ওষুধের নাম লিখে স্টোর থেকে তা তুলে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের হাসপাতালে সরকারের বরাদ্দকৃত ওষুধগুলোর বেশির ভাগই রয়েছে। কোনো ওষুধ না থাকলে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন করে আনারও ব্যবস্থা করে। তবে কিছু কিছু সময় একটি চক্র হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট এর যোগসাজসে রোগীদের সরকারি ওষুধ সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করা হয়। এরপর রোগীদের সেগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়।

এছাড়া আন্তঃ বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় নার্সরা বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে নগদ অর্থ আদায় করে নেন। কেউ যদি তাদের টাকা দিতে না পারে তখন রোগী ও তার পরিবারের লোকদের সাথে রূঢ় আচরণ করেন কর্তব্যরত নার্স’রা। তাছাড়া হাসপাতালের আয়া থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় সকলের আচরণই খুবই উগ্র মেজাজের। মাঝে মাঝে কোনো বিষয়ে নার্সদের কাছে জানতে চাইলে নার্সদের পাশাপাশি আয়া’রা এসেও উচ্চ-বাচ্য এবং গালাগাল করে থাকেন।

একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে থাকা অবস্থায় হাসপাতালটিতে কিভাবে এসব অনিয়মের মহোৎসব চলছে এমন কথার জবাবে ডা. আলী এহসান বলেন- আমি যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা যেন রোগীদের সেবা দেওয়া যায় সে বিষয়টি উন্নয়নের প্রধান অংশ। বিষয়গুলোতে একটু বেশি সময় দেওয়ার ফলে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা হয়তো সুযোগ পেয়ে এধরনের কার্যকলাপ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা অনিয়ম করছে তারা বেশির ভাগই এ হাসপাতালের পুরনো কর্মচারি। একে অপরের সাথে যোগসাজস করে আমার চোখের আড়ালে থেকে অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো পরিচালনা করছে। সেক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো তথ্যই আমার পর্যন্ত পৌঁছে না।

অপরদিকে, মুখমুখি দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃপ কর্মকর্তার সাথে প্রতিবেদকের হাসপাতালে চলতে থাকা এসব অনিয়ম নিয়ে আলাপচারিতার মাঝে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কবির হোসেন ইসিজি বিভাগের টেকনিশিয়ান (এমটিসি) শামীন হাসান এর অনৈতিক কার্যক্রম আড়াল করে প্রতিবেদকে বলেন, অনেক সময় রোগীরা তো কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার রশিদ নিজেরাই নেয় না। তাহলে কিভাবে তাদের দেবে?। এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদক বলেন, নির্ধারিত বিভাগে কর্তব্যরত কর্মচারীরা তো নিজেরাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে ‘ফি’ আদায় করে করেন। তাহলে রিপোর্ট এর সাথেই তো রোগীকে তার জমা দেওয়া ‘ফি’ এর সরকারি রশিদ বুঝিয়ে দেওয়া যায়। প্রতিবেদকের এমন উত্তরে তিনি নিরব হয়ে যান।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. আলী এহসান হাসপাতালে চলতে থাকা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় সরকারি আর্থিক ক্ষতিকে প্রভাবিত করেছে। যদিও তিনি- সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এবং বিষয়গুলো প্রতিবেদকের মাধ্যমে যেহেতু অবহিত হয়েছেন এখন থেকে কড়া নজরদারীতে রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

সরকারি হাসপাতালের এসব অনিয়মকারী দোষীদের শাস্তি প্রদান এবং আত্মসাৎকৃত সরকারের টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা বলেন, অনেক উন্নত সেবা এবং সুবিধা থাকা সত্তেও দুই একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে গোটা হাসপাতালের বদনাম। তাই হাসপাতালটির সুনাম ফিরিয়ে আনতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »