রায়হান রোহানঃ
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনে রিপোর্টার্স ইউনিটির নিজস্ব কার্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক পর্বের উদ্বোধন করেন।
পরে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সিনেটে ‘আগামী দিনের সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ব। রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ব যদি দুর্বল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যম সেগুলোকে প্রভাবিত করে। এবং সুষ্ঠুভাবে চলতে পথ প্রদর্শন করে। তাই রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হবার জন্য সংবাদ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা জরুরী। সাংবাতিকতাকে ‘ওয়াচ ডগ’র সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পালিত কুকুর যেমন বাড়ি পাহাড়া দেয় তেমনি সংবাদকর্মীরা রাষ্ট্রের দেখাশুনা করে।
সংবাদপত্রের ইতিহাস বর্ণনা করে তিনি বলেন, সময়ের পরিবর্তনে সংবাদ মাধ্যমে একটি পরিবর্তন এসেছে। সাংবাদিকতার একটি ইতিহাস রয়েছে। শুরুর দিকটা প্রিন্ট নির্ভর ছিল। অনলাইনের প্রবণতা তেমনভাবে ছিলো না। সে সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হবার পরেই সবাই কোন বিষয় সম্পর্কে অবগত হতো। তবে এখন সকল পত্রিকা অনলাইন নির্ভর হয়েছে। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোন তথ্য পাওয়া সম্ভব। পত্রিকাগুলো অনলাইন ভিত্তিক হওয়ার কারণে প্রিন্ট পত্রিকার প্রবণতা কমতে শুরু করেছে। অনলাইনের প্রভাবে আমেরিকায় একসময় দুই হাজার পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় তিন হাজার পত্রিকা রয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, দিনের পর দিন সংবাদ মাধ্যমে পরিবর্তন আসলেও সাংবাদিকতা রয়েই গেছে। ভবিষ্যতেও সাংবাদিকতা থাকবে হয়ত বা শুধু সংবাদ মাধ্যম পরিবর্তন হয়ে নতুন মাত্রার গণমাধ্যম আসবে। সংবাদ মাধ্যম যে মাধ্যমেই হোক না কেন একজন সাংবাদিককে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে হবে। সংবাদকর্মীকে ডাক্তারের সাথে তুলনা করা যায়। ডাক্তার যেমন রুগীর চিকিৎসা করে তেমনি একজন সংবাদকর্মী সমাজ, দেশ ও জাতীর সেবা করে থাকে। একটি সংবাদ প্রকাশে দেশ ও জাতির যেমন কল্যাণ হতে পারে ঠিক তেমনি একটি সংবাদই পারে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে। তাই সাংবাদিকদের প্রচুর অধ্যয়ন করতে হবে। একজন মানুষ মেধাবী হতে পারে তবে পড়াশোনা একজন মানুষের মনুষত্বকে জাগ্রত করে। তাই সংবাদকর্মীকে অনেক অধ্যয়ন করতে হবে, মনুষত্বহীন সাংবাদিক হওয়া যাবে না।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, সংবাদ মাধ্যমে দিনের পর পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের ফলে আগামী দিনের সাংবাদিকতায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। যেটা আমাদেরকেই মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা পারে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে।
অনুষ্ঠানের রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, অনলাইন জার্নালিজমের যেমন সুবিধে তেমন অসুবিধেও রয়েছে। সংবাদ মাধ্যম অনলাইন নির্ভর হওয়ায় তাৎক্ষণিক যেকোন সংবাদ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
খুব সহজেই যেকোনো বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এদিকে তথ্যগুলো দ্রুত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় ভুল সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার বলেন, একটি দেশের জন্য সাংবাদিকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছোট্ট একটি লেখা দেশের জন্য যেমন কল্যাণকর তেমন অমঙ্গলও হতে পারে। এজন্য সংবাদকর্মীদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, সংবাদমাধ্যম হলো জাতির আয়নাস্বরুপ। সমাজের সকল ঘটনা পুঙ্খানুপঙ্খভাবে তুলে ধরাই সংবাদ মাধ্যমের অন্যতম কাজ। এক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা রাবির সকল ঘটনাকে দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরেন। আমরা চাই সংবাদকর্মীরা তাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ জাতির সামনে তুলে ধরুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, সংবাদকর্মীরা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাগুলো তুলে ধরে। এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ঠিক রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মর্তুজা নুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফরিদের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী রমজান, সাবেক সভাপতি কায়কোবাদ খান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা ছাড়াও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে সাবেক-বর্তমানদের প্রীতি আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি (রুরু) ২০০১ সালের ২৪ শে অক্টোবর যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে মুক্তযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা চর্চা করে আসছে সংগঠনটি।