কথোপকথন চলছে দুজন মানুষের মধ্যে, যারা একে অপরকে মন থেকে চাইলেও সামাজিক ও পারিবারিক বাঁধার কারণে কেউই কাউকে কিছু বলে ওঠে না। তবে তাদের মধ্যে প্রায়ত কথার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
{ বিঃদ্রঃ- কথা গুলো লেখকের একান্ত আপন চিন্তার কাল্পনিক চরিত্র মাত্র। বাস্তবতার সাথে কোনো মিল বা সামঞ্জস্য নেই। গল্পে = ( সমান ) চিহ্ন দ্বারা ছেলেটির কথা এবং – ( বিয়োগ ) চিহ্ন দ্বারা মেয়েটির কথোপকথন বুঝানো হয়েছে }
= এই শুনো, আমি একটা প্রশ্ন করি উত্তর দেবে তো?
- হুম বলো কি প্রশ্ন?
= আচ্ছা মানুষ কেউ কাউকে এতো আপন করে চায় কেন? - জানিনা এসব, বাদ দাও তো। কি করো তুমি?
= আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
-কি বলবো বলো তো? আমিও তো কাউকে আকড়ে ধরতে চাই। তাই না ?!!
= তাহলে, বলো আমি কি করবো? - এই প্রশ্ন তো আমারও
= তুমিই বলো না প্লিজ! - আচ্ছা, পরে বলবো। সময় হলে!!
= আচ্ছা! - আর এভাবে বলার কি আছে? আমি তো আছি তোমার পাশে সব সময়। (পূর্বের কথা অনুযায়ী এমন উত্তর দেয়া)
= আমি কিন্তু তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। - আচ্ছা!
= আমি মনে করি তোমাকে আমার সারাজীবনের জন্য চাই। - মন তো তোমাকেই চায়, আল্লাহ্ ভাগ্যে কি রেখেছে কে জানে। ভয় হয় বড্ড।
= হুম, কিন্তু তুমি চাইলেই জীবনকে বদলাতে পারো। (পূর্বের কথা অনুযায়ী এমন উত্তর দেয়া) - আমাকে সব দিকই দেখতে হবে, একদিকে দেখলেই তো আর হবে না।
= হ্যা, তা ঠিক। - ফ্যামিলির কথা ভাবতে গিয়ে নিজের চাওয়া পাওয়া গুলো বিসর্জন দিয়েছে। তাও সব সময়ই সুখই।
= কিছু জিনিশ তো নিজের চাই, তাই না? - হুম….ওদের কষ্ট দিতে চাই না যে!
= কষ্ট দিতে কে বললো? শুধু তাদের কাছে নিজের কি চাই তা তো জানানো যায়। - ওরা তো..ওপেন বলে..যে কাউকে পছন্দ থাকলে বলতে…ওদের কথা বিয়ে করতে হবে এখন।
= এখন করলে লাইফের বাকিটা কি হবে? নিজেকে কি নিজের মতো করে সাজাতে চাও না? - আমি চাই। আমার অনেক স্বপ্ন। বাট পরিবার সেটা বুঝে না। একা কত লড়াই করা যায়?
= বুঝাও তাদের, একদিন না একদিন টিক বুঝবে। - হিহিহি, কাকে বুঝাতে বলো? পারলে এক বছর আগে ই বিয়ে দিয়ে দিতো। অনেক যুদ্ধ করে টিকে আছি।
= দুবছর ও অপেক্ষা করবে না? পারবে না আগামী দুবছর? - আমি কি বলি, একা লড়াই করা যায় না। যারা পড়াশুনার উপকরণ দেবে…! সেটা না দিলে কোনো কিছুই সম্ভব না। যাক বাদ দাও।
= বাদ দিতে তো পারছি না যে! - আমার তো চাই তোমায়, তোমাকে তো আমার সব কিছুই বলা!
= হ্যা - তুমি আমার দিকটা ভেবে দেখো।
= ভাবছি - আমার জন্য কেন তুমি তোমার জীবন শেষ করবে? বলো।
= তবে চাইলে অনেক কিছু করা যায়, দেখো একটু। - আমি চাইলে কিছুই করা সম্ভব না। কারণ টিকে থাকার জন্য উপকরণ দরকার। সেটাই আমার কাছে নাই।
= আমি দেখবো কথা বলে? - তুই তো পিচ্ছি। কি কথা বলবি?
= বললে অনেক কথাই হবে, আমি শুধু দুইটা বছর চাইবো। - আমি পরিবারের বড় মেয়ে, বাবার দিকটাও দেখতে হয়, আমার মা কি বএ জানিস? বলে যে ভর্তী পরিক্ষা না দিতে।
= নিজের খরচটা নিজে চালিয়ে নিলে কিন্তু অনেকটা চাপ কমে যাবে, একটা বা দুটা টিওশন করলেও পারো, তাতে নিজের খরচ চলবে। হয়তো ফ্যামিলির ও সাপোর্ট হবে। যখন সাপোর্ট পাবে তখন আর ওরা তোমার স্বপ্নের বাধা হবে না।। - সেটা জানি, আর সেটার জন্যে আমাকে হাত পাততে হয় না। কিন্তু, ভর্তী পরিক্ষার জন্যে এতো টাকা! সে তো চাইতে ই হয়। তখন ই সব সমস্যা। যাই হোক। ওদের মাথায় চিন্তা, মেয়ে বড় হইছে। বিয়ে দিতে পারলেই বোঝা কমে।
= বড় হইছে, আরও বড় হতে চায় এটার জন্য নিজের খরচ যখন নিজে চালাবা তখন আর চাপ হবে না, এখন বলে কারণ ওরা, তোমার খরচ দেয়। তুমি তাদের উপর নির্ভরশীল।
আর যখন তুমি তাদের উপর নির্ভরশীল হবা না, বরং তুমিই তাদের সাহায্য করবে তখন কিন্তু এমন হবে না।
আশাকরি বুঝতে পারতেছো আসলে পরিবার কেন বিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করে, যেন তাদের কিছুটা হলেও আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়।
আর যদি তুমিই তাদের আর্থিক উন্নয়নের কারণ হও তখন তো এই চিন্তা আসবে না, কারণ মানুষ কখনোই তাদের সোনার ডিম দেয়া হাসকে মারতে কিংবা বিক্রি করতে চায় না। এটাই বাস্তবতা। - চেষ্টা করছি তো।
= জানো কেন আজকে এতো টাকা খরচ করে আমাকে ঢাকায় কাজ শেখার জন্য পাঠিয়েছে? - প্রাইমারিতে টিকে গেলে!
= কারণ ওরা চায় অন্তত আমি যেন আর্নিং করতে পারি, তাদের সাপোর্ট দিতে পারি। তাদের সাপোর্ট দিয়ে নিজে যা ই করিনা কেন তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না। - হুম।
= এটাই মানুষের জীবন, ভাগ্যের নিয়তি। তোমাকে এটা বুঝতে হবে।
শুধু যে প্রাইমারিই একমাত্র রাস্তা তা কিন্তু না, তুমি যে টিকে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই তার অল্টার্নেটিভ কিছু করতে হবে। - সেটা তো জানি।
= যেমন ধরো আমি সফটওয়্যার এর কাজ শিখি। তার পাশাপাশি একটা নিউজ পেপার করার কারণ কিছু অল্টারনেটিভ।
তুমি কিন্তু চাইলেই এখন দুটা টিউশন করাতে পারো, এতে তোমার খরচ পরিবারের কারো কাছে চাইতে হবে না। তখন তুমি বলতে পারবে আমি নিজের ভরসায় কিছু করতে চাই। - সে তো করি ই। তবে বড় কিছু করতে গেলেই চাইতেই হয়।
= এমন কিছু করো যেন আর না চাইতে হয়। যেমন তুমি সেলাই জানো, এটা দিয়েও হালকা আসবে। তার পাশাপাশি অন্য কিছু। সেটা ছোটই হোক না কেন! আস্তে আস্তে বড় হবে। তবে কিছু একটা করতে হবে।। - সেলাই?!! একবার শিখতে গিয়েছিলাম, টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ৩০ জন ছিলাম।
= নিজেদের মেশিন আছে? আচ্ছা, সেলাইটা বাদ দিলাম। অন্য কিছুও তো করা যায়। করার মতো অনেক কিছু আছে। - সেটাই। আমি খালি চোখে দেখি না যে।
= দেখতে হবে, দেখে দেখে খুঁজে নিতে হবে। কটা টিউশন করাও? - দিখেয়ে দিতে হয় যে!
= সেটার জন্য নাহয় আমি থাকলাম - আমি…চলার পথের প্রেরনা পেলাম।
= প্রেরণা কিনা জানিনা! - এতো দিন…সাপোর্ট দেওয়ার মত কেউ পাশে ছিল না….এই জন্য…নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসতে নিছিলাম। পোষ্টও দিয়েছিলাম।
= আশাকরি আমি তোমায় দিকনির্দেশনা দিতে পারবো, আমি না পারি অন্যের কাছে যেনে তা জানাবো। আমাকে অন্তত পাশে থেকে এটুকু করার সুযোগ দিও। - হুম, যাকে ভালবসা যায় তাকে কষ্ট দেওয়া যায় না। তারপরেও, পরিস্থতি! কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায়…বলা যায় না।
= সেটা মেনে নিলাম নাহয়। অনেক পরিস্থিতিই তো মেনে নিতে হয়েছে। আজ থেকে নাহয় নতুন একটা গল্প শুরো হবে। - তোর গল্পের শেষ হবে না রে! তোর জন্য আমার চিন্তা হয়।
= কিসের চিন্তা? - এই টুকু বয়সেই এত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, আর বাকিটা তো আছেই।
= শুনি?
কষ্ট! সে তো আমার নিত্য দিনের খেলার সাথী। আর সেটা শুধু আমার না, পৃথিবীর সব মানুষের ই সাথী এই কষ্ট। - হুম। আজ তাহলে যাই।
= যাও। তবে কথা গুলো মনে রেখো, হয়তো কাজে দেবে।
এভাবেই একজন আরেকজনকে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস দিয়ে ঘুমোতে যায় রোজ। তাদের গল্প জেগে রয় সারারাত ধরে।