রায়হান রোহানঃ
দুটি বেডের মাঝখানে মাত্র এক বা দুই ফুটের দূরত্ব। একটি রুমের মধ্যে এভাবে সাজানো ১৫, ২০, ৩০টি কিংবা ৫০টি বেড! হয়তো এ রুমের ধারণক্ষমতা ৫০ ছাত্রীর। কিন্তু ডাবলিং করে থাকছেন ১শ’ ছাত্রী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রী হলের চিত্রই অনেকটা এ রকম। গাদাগাদি করে থাকছেন তারা, নেই পর্যাপ্ত শৌচাগার। পড়ালেখা যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ৬টি আবাসিক হলে প্রায় নয়শ’ শিক্ষার্থী গণরুমে বসবাস করছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে গণরুমে ধারণক্ষমতা ৫০ জন, যার বিপরীতে ১শ’ ছাত্রী থাকছেন।
খালেদা জিয়া হলের গণরুমের ধারণক্ষমতা ৮০ জনের বিপরীতে ১৬০ জন, রোকেয়া হলের গণরুমে ৭৫ জনের জায়গায় থাকছেন ২শ’ জন, তাপসী রাবেয়া হলে কলরব নামের গণরুমে ধারণক্ষমতা ৮০ জনের স্থলে ১৭০ জন, মুন্নুজান হলে গণরুমের ধারণক্ষমতা ৬০ জনের বিপরীতে ১২০, রহমতুন্নেছা হলের গণরুমে প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী বসবাস করছেন ১০০ জনের বিপরীতে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গণরুমে দুই বেডের মাঝখানে মাত্র এক থেকে দুই ফুটের দূরত্ব।
পড়াশোনার কোনো পরিবেশ না থাকায় পরীক্ষার সময় বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। এছাড়াও গরমের সময় কষ্টের সীমা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। ফলে রুমে সুস্থ পরিবেশ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হন।
বিভিন্ন হলে গণরুমের শিক্ষার্থীরা জানান, গণরুমগুলোর পরিবেশ স্যাতসেতে ও জরাজীর্ণ। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয়। তাপসী রাবেয়া হলের গণরুমের বৈদ্যুতিক লাইনে প্রায়ই শর্ট-সার্কিটের ঘটনা ঘটে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। খালেদা জিয়া হলে রিডিং রুম থাকলেও অধিক শিক্ষার্থীর কারণে সেখানে সবার জায়গা সংকুলান হয় না। ফলে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গণরুমে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এবং সঠিক পরিবেশ না থাকায় নিজের মা-বোনকে কখনোই হলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়াও হলগুলোতে অহরহ চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রীষ্মকালে গণরুমের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। বঙ্গমাতা হলে ৮০টি সিটের গণরুমে জানালা রয়েছে মাত্র ৪টি। ফলে সব সময় সেখানে প্রচুর গরম থাকে। সেখানে বসবাস করা অনুপযোগী হয়ে উঠে বলে জানান তারা।
জানা গেছে, গত বছর তাপসী রাবেয়া হলের গণরুমে শর্ট-সার্কিটে বৈদ্যুতিক বাল্বের বিস্ফোরণে মোবাইল ফোনের চার্জারে আগুন লাগে। এতে কয়েকটি মোবাইল ফোন পুড়ে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ৬ শিক্ষার্থী আহত হন।
নাম প্রকাশ না করারশর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গণরুমগুলোকে অনেকটা জেলখানার সঙ্গে তুলনা করা যায়। এখানে কোনো ধরনের পড়াশোনা ও বসবাসের পরিবেশ নেই।
হল প্রশাসনের পদক্ষেপের বিষয়ে রহমতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. রুকসানা বেগম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অনেক ছাত্রী ভর্তি হয়। যাদের হলে না থাকলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে হাজার কষ্ট হলেও তারা গণরুমে থাকতে চায়। তবে হলে রুমের সংখ্যা বাড়াতে পারলে কিছুটা কষ্ট কমবে।
খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবা সরকার বলেন, একটি গণরুমে ১৫০ শিক্ষার্থীর ধারণক্ষমতা থাকলেও ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে অ্যালট দেয়া হয়। যার ফলে সমস্যা তৈরি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু সাংবাদিকে বলেন, ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুপাতে হল নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য শেখ হাসিনা হল নামে একটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে এরই মধ্যে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকার জন্যই এত কষ্টেও হলে থাকেন বলে দাবি করেন তিনি।
রাবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকে বলেন, হলের গণরুমগুলো পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যেই ছাত্রীদের জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন হয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলে ছাত্রীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।