এম.জে.এ মামুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ নামক স্থানে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের জন্য দুটি ট্রেনে সংঘর্ষে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ১৬ জন নি’হত, শতাধিক আহত হয়েছেন। কর্মকর্তারা জানান, উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথার মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে চলন্ত অবস্থায়। উদয়নকে লুপ বা সাইড লাইনে যখন পাঠানো হচ্ছিল তখন এর পেছনের তিনটি বগি মূল লাইনে থাকতেই ঢাকাগামী তূর্ণা চলে আসে এবং এ সংঘর্ষ ঘটে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ট্রেন দুটো দুই দিকে যাচ্ছিল। ঘটনার পর স্থানিয় মসজিদ থেকে মাইকিং করে উদ্ধারে ও সেবায় এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার জন্য জানানো হয়।
কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার ভুইয়া জীবন জানান, উক্ত ভয়াবহ ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হতাহতদের দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করাহয়। আটকে পড়া যাত্র্রীদের খাবারের ব্য্যবস্থাও করেছে উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যান আরো জানান, আইনমন্ত্রী উক্ত দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন যাত্রীদের সুবিধামতো স্থানে পৌছে দেয়ার জন্য যেন পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। আইমন্ত্রীর বাড়ি এই কসবা উপজেলায়।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা সকাল সোয়া সাতটায় জানান, এ পর্যন্ত ১৫ জন নি’হত হওয়ার ব্য্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ৯ জন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র্রে ৩ জন, বৃাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দুই জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃ’ত্যু হয়।
মন্দবাগ স্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চোধুরী বলেন, তূর্ণার চালক তথা লোকো মাস্টারকে ট্রেন থামানোর জন্য আউটার ও হোম দুই স্থানেই লাল বাতি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত চালক ট্রেন দাঁড় করাননি বলেই এ দু’র্ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তারা জানান, অনেকের কাটা হাত-পা উদ্ধার হয়েছে। হ’তাহতদের উ’দ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নি’হত একটি শিশুর পরিচয় পাওয়া গেছে। মেয়েটির নাম সোহানা। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। শিশুটির চার জন স্বজন গুরুতর আ’হত। মৃ’তের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কান্তি দাস দু’র্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। ট্রেন দুইটির কয়েকটি বগি লা’ইনচ্যুত হয়েছে। এতে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দু’র্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার বরকত উল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, তাদের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে সহায়তা করেছেন।
তূর্ণার যাত্রী কাজী ফজলে রাব্বী বলেন, আমি হালকা ঘুম ঘুম ভাবে ছিলাম। ২টা ৫৬ মিনিটে ভয়াবহ ঝাঁ’কুনিতে হঠাৎ থমকে উঠি, তারপর ট্রেন থেমে যায়। তিনি ট্রেন নেমে দেখেন ভয়াবহ দৃশ্য।তিনি বলেন এ দৃশ্য অসহনীয়।
এদিকে দুপুরে কুমেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নুরুল ইসলাম।
এর আগে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, নি’হত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
দু’র্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। কেন এ দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ত’দন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক ত’দন্তে দেখা গেছে চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দু’র্ঘটনাটি ঘটে।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ও রেলওয়ে থেকে দু’টি পৃথক ত’দন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা গতকাল রাত ২টা ৪৮ মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হয়। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ট্রেনটিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে সিগন্যাল দেয়। অপরদিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশকালে স্টেশনমাস্টার ট্রেনটিকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেন।
ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করেন। ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অপর দিক থেকে আসা তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগনাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালান। এ সময় উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সঙ্গে তূর্ণা নিশীথার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।