২১ নভেম্বর, ২০২৪

ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

জীবন কথা (নারী)

1 min read

কলমে- রূপা বাড়ৈ

নারী বলেই কি সরল মনের হতে হবে, যে যা বলবে তাই শুনতে হবে, কিচ্ছু বলতে পারবে না, তাই কি হয় কখনো। নারী কি মানুষ না, তার কি মতামত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।

নারী’র মন নরম হলেও, অনুভূতি অনেক শক্ত, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে তার ছুটে চলা, তাই সে বড় কঠিন পথেও চলতে ভয় পায় না। চলার পথে পা পিছলে পড়ে গেলেও, আবার উঠে নিজ মনোবলে চলতে পারে।


কেউ যদি নারীকে ভালোবাসে, তাকে খোঁপা করা চুলের মতো সুন্দরভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়ে বেঁধে রাখে। আবার কেউ যদি অবহেলা করে, তাকে খোলা চুলের মতো অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারে।

কোনো কোনো বাবার মনে সুপ্ত বাসনা থাকে, তার কন্যাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবে। সমাজে মাথা উঁচু করে যেনো তার কন্যাসন্তান জীবন যাপন করতে পারে, সেই স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে, খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে পড়াশুনা করান। অনেক স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে একটি স্বপ্ন লালন করে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। কন্যা চাকরি করে নিজের পা’য়ে দাঁড়াবে, কারো মুখাপেক্ষা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে না।

কিন্তু সমাজের রীতি অনুযায়ী মেয়েকে যখন বিবাহ দেন, তখন তার স্বামী চাকরি করতে দিতে চান না। কারণ বউকে সমীহ করে চলতে হবে, অন্যায় ব্যবহর করা থেকে বিরত থাকতে হবে, সেই ভয়ে। যদিও কেউ কেউ চাকরি করতে দেন, কিন্তু বউ এর মা- বাবা’কে সহযোগিতা করার জন্য উপার্জিত অর্থের অংশ দিতে চান না। অনেকে আবার বলে কর্মজীবি নারী ভালো হয় না, অল্পদিন চাকরি করেই ওদের চোখ কান ফুটে যায়। ওরা সংসার করতে পারে না, কিছু হলেই সংসার ভেঙে চলে যায়।

কথাগুলো আসলে কি ঠিক, যদি ঠিক হতো তাহলে সবার বেলায় এক রকম হবার কথা। পুত্রবধূর বেলায় এক রকম ভাবনা আর নিজের মেয়ের বেলায় আরেক রকম ভাবনা কেনো হবে।

যখন স্বামী ব্যক্তিটি বাবা হন, তখন তিনিও ঠিক তার স্ত্রীর বাবার মতো করেই ভাবেন। তার চাওয়াও হয়, কন্যা স্বাবলম্বী হোক। অনেকে স্বীকার না করলেও উপলদ্ধি করতে পারেন, তার স্ত্রী’র সাথে যে আচরণ করেন তা একদম ঠিক করেন না। অন্যের কন্যাকে কষ্ট দিলে, নিজের কন্যার কষ্ট’টাও কাঁটার মতো বুকে লাগবে ঠিক একদিন।

নারী জীবন মানে এক পুরুষের হাত থেকে অন্য পুরুষের হাতে স্থানান্তরিত হওয়া। বাবা অথবা স্বামী, যখন যার ঘরে থাকে, তখন তার ইচ্ছেতেই নারীর জীবন চলে।

যদিও বর্তমান সমাজে প্রচলিত আছে, নারী পুরুষ পাশাপাশি কাজ করবে। সেই ভাবনা থেকে এখন পুরুষদের মন – মানসিকতা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারাও চায় নারী কাজ করুক, স্বাবলম্বী হোক। তবে কথাটি পুরোপুরি সফল হয়নি। আমাদের দেশে, পরিবর্তনের সংখ্যা খুবই কম।

নারী যে বাহিরে কাজ করে, সেটা নারী চেয়েছে বলেই যে সম্ভব হয়েছে, তেমনটা কিন্তু নয়। স্ত্রী চাকরি করলে সংসার স্বচ্ছলভাবে চলবে সেই ভাবনা থেকেই কিছু পুরুষ স্ত্রী’কে কাজ করার জন্য সুযোগ দিয়েছে। তবে সেজন্য নারীকে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়। পরিবার সামলিয়ে তারপরে নারীর চাকরি করতে যেতে হয়। এছাড়া পরিবার সহ সমাজের সকল শ্রেণীর সন্দেহজনক চোখ নারীকে তাড়া করে বেড়ায়। নারী সঠিক মূল্যায়ন কোথাও পায় না। নারীর কণ্ঠনালী চেপে ধরে রাখতে চায়, অন্যায় ফাঁস হবার ভয়ে। হাত পা বেঁধে রাখতে চায়, অনিয়ম দূর্গ ভেঙে পড়ার ভয়ে।

একজন পুরুষ ও নারীর মিলিত সম্মতিতেই একটি সংসারের সৃষ্টি। সেই সংসারে দুটো দিক থাকে, একটি সংসারের ভিতর অংশ অর্থাৎ চার দেয়ালের ভেতরের কর্মকাণ্ড। আরেকটি বাহিরের জগত অর্থাৎ চার দেয়ালের বাহিরের কর্মকাণ্ড। ভিতর অংশের কাজের মধ্যে সংসার’কে সুচারুভাবে পরিচালনা করা ছেলে মেয়ে দেখাশোনা করা খাবার তৈরি করা ইত্যাদি। আর সংসারের বাহির অংশের কাজ হচ্ছে, এক কথায় টাকা উপার্জন করা। দুটো কাজ’ই অত্যন্ত কঠিন এবং সংসারের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ বহন করে। এই দুটো কাজ স্বামী স্ত্রী দুজনকে ভাগ করে নিতে হয়। কে বাইরে কাজ করবে এবং কে ঘরে কাজ করবে, সেটা যে কেউ করতে পারে।

স্ত্রী যদি বাইরে কাজ করতে চায় তবে সেটা সে করতে পারে, কিন্তু তাকে পরিপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে অর্থ উপার্জনের সম্পূর্ণ’টাই তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বামীও ঘরের দায়িত্ব পালন করতে পারে, ছেলে মেয়ে দেখাশোনা, রান্নাবান্না সহ ঘরোয়া সকল কাজ করতে পারে। কিন্তু দুজনেই এক সঙ্গে চাকরি করলে, সবকিছু এলোমেলো হবার ভয় থাকে। যদি সংসারে তেমন কোন অভাব অনটন না থাকে, তাহলে একজনের চাকরি করা উচিৎ। আর যদি তারা মনে করে দুজনেই চাকরি করবে, তাহলে ঘরের কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিলে, তেমন কোনো সমস্যা হবার কথা না।

সন্তানদের লালনপালন করতে যদি বুয়া রাখা হয়, তাহলে সন্তান সঠিক ভাবে গড়ে উঠবে না। সন্তানদের আচরণে নানা রকম সমস্যা দেখা যাবে। অথচ মা- বাবার সংস্পর্শে থেকে তারা উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। কাজেই যখন কোন নারী বলে লেখাপড়া করেছি চাকরি করব। লেখাপড়া শিখে চাকরি না করেও তার ঐ শিক্ষাকে ব্যবহার করা সম্ভব। তার শিক্ষা দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করতে পারে। পরিবার ঠিক রেখে এমন অনেক কাজ আছে যা করা সম্ভব, সে সকল কাজে নারী নিয়োজিত থাকতে পারে। তারপরেও যদি কোনো নারী তার ক্যারিয়ার গঠন করার লক্ষ্যে অতিমাত্রায় মনোযোগী হয় তবে তার বিয়ে না করাই উচিৎ হবে।

সন্তান লালনপালনের জন্য মা’য়ের কোল’ই সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। মা’য়ের কোমল হাতের পরিচর্যা ছাড়া সন্তান সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। একটি সংসারে প্রত্যেকটা মানুষেরই আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্বগুলো সকলের উচিৎ সঠিকভাবে পালন করা। সঠিক শিক্ষায় সকলের জ্ঞানপ্রদীপ জ্বলে উঠুক।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »