‘হাসপাতালে চাকুরী দেওয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগীদের বিক্ষোভ মানববন্ধন’
1 min readদেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি হাসপাতালে চাকুরী দেওয়ার নামে শতাধিক চাকরি প্রত্যাসীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা।
শুক্রবার দুপুরে দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত ও জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে “মা-শিশু এবং ডায়াবেটিস হাসপাতালের” একটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কয়েকশত চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে ওই মানববন্ধন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পৌর শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্দুল হালিম ভান্ডারী, জাতীয় যুব সংহতির উপজেলা আহবায়ক মো. সেলিম মিয়া, মো. আলমঙ্গীর মুন্সী, পারভীন আক্তার, নজরুল ইসলাম, লাইলী আক্তার, মো. আবদুল কাদের মিয়া, আকলিমা আক্তার, মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
ভোক্তভ‚গীরা জানান, দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ২৪ কোটি ৫৪ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুমিল্লার সর্ববৃহত ও অত্যাধুনিক ৬ তলার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ‘জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় “মা-শিশু এবং ডায়াবেটিস হাসপাতালের’ জনবল নিয়োগের আশ^াসে আমাদের থেকে ফাউন্ডেশনের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি সাবেক সিনিয়র যুগ্ম- সচিব একেএম খায়রুল আলমের ভাই একেএম সামসুল আলম, একেএম সফিকুল আলম কামাল, সফিকুল আলম কামালের শ্যালক খালিদ হাসান, ভাতিজা একেএম রাজিব, বেগমাদের সুজিত পোদ্দার, ঠিকাদার হাজী কেফায়েত উল্লাহসহ আরো বেশ কিছু লোক চাকরি দেয়ার নামে শতাধিক চাকুরি প্রত্যাশির কাছ থেকে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়।
এছাড়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম জাহাঙ্গীর মোল্লা স্বপন জানান, এ পর্যন্ত ৭২ জনের প্রায় দেড় কুটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। বাকীদের তালিকাও করছি। ওই হাসপাতাল ভবন নির্মাণে প্রাক্কলন ব্যয় হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তর ৮০% ও ‘জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ ২০% অর্থায়নে ওই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। কাজটি পান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘পি.সি এন্ড এন্ড এম.এস.সি (জেভি)। ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ও আওয়ামীলীগ নেতা হাজী কেফায়েত উল্লাহ ২০২২ সালে লিফট কেনায় দূর্নীতির কারনে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সকোসের জবাব, ক্ষতিপুরন ও অন্যায় স্বীকার করে নতন করে জাপানী কোং’র লিফ আনা হয়।
ওই হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও নির্মান কাজে অনিয়ম দূর্নীতির কারনে দু’দফা নির্মানে সময় বৃদ্ধির পরও হাসপাতালটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ (জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মেডিকেল অফিসার ৩ জন, প্যাথলজিষ্ট ১জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১জন, মার্কেটিং একজিকিটিভ ১জন, সহকারী নার্স-২ জন, ল্যাব প্যাথলজি সহকারী ১জন, এক্স্রে সহকারী ১জন, সিকিউরিটি গার্ড ২জন, অফিস সহায়ক- ১জন, আয়া ১জন, ক্লিনার-১জনসহ ১১ পদে ১৫ জন নিয়োগ করা হবে।) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর চাকুরি প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশ ও ক্ষোভ বিরাজ করে।
মানববন্ধন চলাকালে ভোক্তভ‚গীরা বলেন, চাকরি দেয়ার নামে আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
মো. সেলিম জানান, আমি ও আমাদের গ্রামের কয়েকজন সন্তানদের চাকরির আশায় হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি সাবেক সিনিয়র যুগ্ম- সচিব একেএম খায়রুল আলমের ভাই, একেএম সামসুল আলম ৩ বছর পূর্বে জমি বিক্রি করে, সূদে এনে, ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে কয়েক লক্ষ টাকা দিলেও চাকরিতো পাইনাই, যিনি টাকা নিয়েছেন সেই একেএম সামসুল আলমের মৃত্যুর কারনে টাকা প্রাপ্তিটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন আমার সূদের টাকা পরিশোধ করতে যেয়ে গহনা সহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে এখন নিঃস্ব।
জয়পুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা জানান, বেগমাবাদ গ্রামের সুজিত পোদ্দার ৩শত টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে আমাকে ফাউন্ডেশনের কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেয়ার আশ^াসে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন। টাকা দেয়ার বিষয়টি হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক একেএম সফিকুল আলম কামাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে দিয়েছিলাম।
বারেরা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ৪ বছর পূর্বে জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক একেএম সফিকুল আলম কামাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে ওনার শ্যালক খালেদকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেই। টাকা ফেরত দেয়ার জন্য একাধিকবার সময় দিলেও টাকা ফেরত দিচ্ছেনা।
একেএম সফিকুল আলম কামাল বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যে, ভিত্তিহীন, এ এলাকার জন্য একটি বৃহৎ হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। যাতে ১০০ জনের ৩০ জন দরিদ্র রোগী বিনামূল্য চিকিৎসা ও ঔষধ ফ্রি পাবে। একটি মহল ষড়যন্ত্র করেই ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
এব্যপারে জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জেড এম মিজানুর রহমান খান এর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারিনি। তখন তিনি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা কর্মকর্তাদের নিয়ে রামঘর পিকনিক স্পটে ছিলেন।