২১ নভেম্বর, ২০২৪

ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

পাহাড়ে হচ্ছেটা কী? (খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সংঘাত)

1 min read

নাহিদ আলম আসিফ :

যারা সাজানো ভিডিও দেখে আবেগ মারাচ্ছেন, তাদের জন্য আমার পাহাড়ে বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম৷

আমার জন্ম পার্বত্য অঞ্চলের রাঙ্গামাটি জেলার এর লংগদু উপজেলায়। সে সুবাদে আমি ছোট থেকে একটা শব্দের সাথে পরিচিত ছিলাম শান্তিবাহিনী। মা ছোট বেলায় দূরে কোথাও যেনো না যাই তাই জন্য ভয় দেখাতো ঐ খানে শান্তিবাহিনী আসছে, যাইস নাহ। আরেকটা শব্দ শুনতাম শান্তি চুক্তি! কিন্তু এসব এর কিছু ই বুঝতাম নাহ।

ঘটনা – ০১ :
আমার সম্ভবত বয়স খুব হলে ৬ কিংবা ৭ বছর চলে। রাত হলে হাতি& শান্তিবাহিনী ভয় পেতাম আমরা। প্রবীণ রা তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতো যা থেকে একটা ভীষন ভয় ডুকে গিয়েছিলো। পাশের বাড়ির লোকেরা ইয়া বড় ড্রেন খুঁড়তে লাগলো। জিজ্ঞেস করতাম কেন? কেউ কিছু বলতো না। খুঁড়তো প্রতিদিন ই। একদিন হঠাৎ করে গুলাগুলির আওয়াজ। আব্বা মা আমাকে আর ভাই কে নিয়ে দৌড়ে চলে যায় ঐ পাশের বাড়ির গর্ত করা ড্রেন এ। এবং এক পর্যায়ে মনে পড়ে আমার বোন কে ঘরে রেখে আসছে। আবার দৌড়ে যায় মা/ বাবা। এর পর আমরা শুধু এলোপাতাড়ি গুলির আওয়াজ শুনি। একটু মাথা উঁচিয়ে সবাই দেখছিলো, আমিও দেখতে লাগলাম। গুলির আগুন এর ঝাটকা বুঝা যাচ্ছে, ব্রিজ এর ওপার থেকে গুলি ছুড়তে থাকে অনবরত। এরপর এক পর্যায়ে তারা চলে যায়। সে যে ভয় পেয়েছিলাম৷ তারপর থেকে দূরে কোথাও যেতাম নাহ সচারাচর৷

ঘটনা – ০২ :
স্কুল থেকে এসে দেখি আমাদের এলাকায় খুব হৈ-হুল্লোড়, যা আমি কখনোই দেখি নি৷ সবাই বলাবলি করছে সাবেদআলী রে মারছে, কি নির্মম কইরা মারছে রে। যেহেতু আমাদের বাড়ি হয়ে পাহাড়ে যায় মানুষ ঝাড়ুর ফুল,বাঁশ কাটতে, এবং সাবেদ আলী কে পাহাড়ে হত্যা করা হয়েছে সেহেতু লাশ বাড়ির সামনে দিয়েই যাবে৷ ঘন্টাখানেক পর দেখলাম একটা বাশ এ হাত পা বেঁধে ঝুলিয়ে আনা হচ্ছে লাশ। দৌড়ে গেলাম বাজারের মাঠে, চোখে মুখে, জেদ, আতঙ্ক আমার। এতোশত মানুষের ভীরে কোনরকম ভেতরে ডুকতে পারলাম৷ দেখলাম জিহ্বা টা স্বাভাবিক এর চেয়ে ৩ গুন বাহিরে বের হয়ে আছে, সারা শরীর সিগারেট এর আগুনে পোড়া হয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে৷ এই দৃশ্য দেখার পর ঘুমাই নি বহু রাত৷ ভাবতাম কিভাবে যে এলাকা ছেড়ে পালাতে পারি, কিভাবে! সে বিচার আজ পর্যন্ত নিহতের স্বজনরা পায় নি৷

ঘটনা – ০৩ :
আমি তখন আলফেসানী স্কুলে পড়ি, পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ঘর গুলো সেদিকে কাছে হওয়ায় তারা সেখানে প্রভাব বিস্তার করে। স্কুলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তারা তুলকালাম মারামারি করতো। একবার বসে আছি টিফিন টাইমে, সব গুলো পাহাড়ি এক সাথে হলো আর কি যেনো বিরবির করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর তারা এক বাঙ্গালী ছেলে কে ডিরেক্টর হুমকি দিল তুই আজকে গেট থেকে বের হ, তোরে আজলে লাশ করবো। এর পর আমি যেহেতু নিজ কানে শব্দ টা শুনলাম আমি একদম শুরু দিকে বের হয়ে গেইট এর সামনে একটা সিঙ্গারার দোকান ছিলো, সেখানে বসলাম। ছেলে বের হতে ই তাকে ১৫-২০ জন মারতে লাগলো। ভাগ্যক্রমে সেদিন কাঁঠালতলির ছেলেরা এসে ঐ ছেলে কে বাঁচিয়ে নেয়। কিন্তু তৎক্ষনাৎ ছেলের নাক ফেঁটে যায় এবং সমস্ত শরীর রক্তে লাল হয়৷

পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর কি পরিমাণ সাহস হলে এরা সরাসরি সেনাবাহিনী হত্যা করে? তাহলে আপনি আমি সাধারণ মানুষ নিরাপদ কোন চিন্তায় ভাবেন? আপনি তাদের সহজেই বন্ধু বানিয়ে ফেললেও তারা আপনাকে কখনো কোন ভাবেই বন্ধু বানাবে না মন থেকে৷ উপরে উপরে খুব খাতির রাখবে৷ আপনার খুব ভালো বন্ধু, বন্ডিং ভালো কিন্তু তাদের কথাকথিত আদিবাসী দিবস এলে দেখবেন তাদের আসল রুপ৷ তাদের প্লেকার্ড গুলো তে কি লিখা হয়। তারা সরাসরি স্লোগান দেয় সেনাবাহিনীর চামরা, তুলে নিবো আমরা। ৩ পার্বত্য অঞ্চল (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি,বান্দরান) কে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে চায়। সেটার নামকরণ তারা করেও রেখেছে জুম্মল্যান্ড।

পাহাড়ে নব্য মুসলিম ধর্ম গ্রহন করা ওমর ফারুক কে গুলি করে মসজিদে হত্যা, কিংবা ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যা, কিংবা সেনাবাহিনী হত্যার বিচার কই? সে নিয়ে শহরের পাব্লিক গুলোর প্লেকার্ড কই? পোষ্ট কই? কিচ্ছু নেই। কিন্তু তারা বানোয়াট ইমোশনাল ভিডিও দিতেই পাব্লিক হুমড়ি খেয়ে শেয়ার দিয়ে লিখছে, পাহাড় ভালো নেই! আমি বলি আপনার মস্তিষ্ক ভালো নেই৷ এদের সংখ্যা এখন কম নয়৷ এরা সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায়৷ তাহলে ভাবুন কি পরিমান অস্ত্র থাকলে এমন চিন্তা ভাবনা সম্ভব? ২৩৫ টা সেনা ক্যাম্প কেন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো আওয়ামী লীগ সরকার। ভাবুন একবার!

উপজাতিরা বলতে চায় সেনাবাহিনী নাকি পাহাড়ের বন উজার করে ফেলতেছে। বন উজার? নাকি গহীন পাহাড়ে সেনা টহল এর গাড়ি পৌছানোর জন্য রাস্তা তৈরি? সেটা তারা বলে না। কারন বললে তো বাঙ্গালী সুশীল সমাজের সাপোর্ট পাবে না। সেনাবাহিনী বান্দরবনে অস্ত্রধারীদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কয়েকজন মারা গেছে। সংখ্যাটাও কম নাহ৷ তাই সেনাবাহিনী পাহাড়ে রাস্তা তৈরি করতেছে যেনো অস্ত্রধারী সংগঠন গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় যানবাহন নিয়ে একশন এ যেতে পারে৷

আমরা কেমন বোকাচো**দা জাতি একবার চিন্তা করেন! ঢাকা টু কক্সবাজার রেল লাইন তৈরি করতে কয়েক লক্ষ গাছ কাটা গেলো সে নিয়ে কথা বলি না৷ কিন্তু কেন সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য রাস্তা তৈরি করবে সেনাবাহিনী সেটার কৈফিয়ত দিবে হবে!

এই রাস্তা কি পাহাড়ের সাধারণ মানুষ এর কাজে লাগবে না? আপনার বউ রে তো মিয়া ডেলিভারির টাইম হলেই ৫ মিনিট এ ভিআইপি হাসপাতালে নিয়ে চলে যান! তাহলে পাহাড় এর মানুষ কি করে? কিভাবে লোকালয় এ আসে? এই রাস্তা তাদের চিকিৎসা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে না?

আপনি এতো আবেগী বাঙ্গালী! তাইলে যখন সেনাবাহিনী হত্যা হলো, ওমর ফারুক ত্রিপুরা হত্যা হলো, ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যা হলো তখন আবেগ কোথায় ছিলো ?

আবেগ না সুধিয়ে আগে জানুন পাহাড়ে কি হয় সব সময়।কেন সেনাবাহিনীর মতো এতো শক্তিশালী বাহিনীর সদস্য নিহত হচ্ছে পাহাড়ে? এদের অপকর্ম সমন্ধে ধারনা না থাকলে আবেগ না মারিয়ে ঘুমান৷ কাজে দিবে৷

সেনাবাহিনী প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্প পুনরায় বহাল চাই। পাহাড়ে নিয়মিত যৌথ বাহিনীর অভিযান চালনা করে অস্ত্র সব উদ্ধার করা প্রয়োজন। নয়তো অচিরেই ৩ পার্বত্য অঞ্চল কে বাংলাদেশ বলার আর কোন ওয়ে থাকবে না।

লেখা: নাহিদ আলম আসিফ (পাহাড়ী বাঙ্গালী)

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »