বিরলে ভূমিহীনরা পায়নি ঘর, অথচ চলছে গোপনে বিক্রির চেষ্টা!
1 min readদিপংকর রায়, দিনাজপুর:
দিনাজপুরের বিরলে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারদের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দখলে রেখে চলছে গোপনে বিক্রির চেষ্টা। ঘর গুলোর পাশেই থাকা ভূমিহীন পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি এই প্রকল্পের ঘর।
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর গোপনে বিক্রির চেষ্টা চলছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার ৯নং মঙ্গলপুর ইউনিয়নের প্রকল্পের আওতায় পাওয়া ঘরের তথ্যের খোঁজ নিলে। এখনো অন্তত ১১টি পরিবার উঠেনি ঘর গুলোতে, আর এই ঘর গুলোর মধ্যেই চলছে কয়েকটি ঘর বিক্রির চেষ্টা। অথচ এই ঘর গুলোর আশে পাশেই খোজ মিলে বেশ কয়েকটি ভূমিহীন পরিবারের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারী ভাবে ঘরগুলো হস্তান্তরের পর ঘরে না উঠে শুধু দখলে রেখেছেন তারা। ঘর গুলো দখলে রাখতে কালে ভদ্রে রাত্রি যাপন আর রয়েছে নানা অজুহাত। অভিযোগ রয়েছে ভূমিহীন নয় এমন ব্যক্তি ও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ঘরের বরাদ্দ। কিন্তু চাপইড়ের রাধা কান্ত ও উত্তর বিষ্ণুপুরের বিজয় (চৌকিদার), বিষ্ণুপুর বিলপাড়ের মহেন ও রুদ্রপুর গ্রামের বিধবা প্রতিমা রানীর মতো দিনমজুর ভূমিহীনদের ভাগ্যে জোটেনি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর। সবাই বর্তমানে বাস করে অন্যের দয়ায় মানুষের জমিতে। রাধা কান্ত মেয়ে জামাই নিয়ে বাস করেন দুই বাড়ি চিপায়, উত্তর বিষ্ণুপুরের বিজয় চৌকিদারের ছেলে বৌমা নাতি ঘরে থাকার জায়গার অভাবে আসেন না বাড়িতে, বিষ্ণুপুর বিলপাড়ের মহেন স্ব স্ত্রীক থাকের ভাগনের বাড়িতে আর ঝগড়া হলেই বের হয়ে যেতে বলেন বাড়ি থেকে। বিধবা প্রতিমা রানী দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকেন মায়ের বাড়িতে। তাদের অবস্থা এতটাই লাজুক তা বলার অপেক্ষা থাকে না।
ভূমিহীন পরিবার গুলোর সাথে কথা বললে হতাশা ও আক্ষেপ করে বলেন। সরকার হামাক দেখা পায় না, হামারলার কত কষ্ট( তাদের অনেক কষ্ট সরকার দেখতে পাচ্ছে না তাদের)। ঘর পাবা গেলে বলে টাকা লাগে, হামার টাকা পাইসা নাই ( ঘর পাইতে টাকা লাগে, তাদের টাকা পয়সা নেই)। কাক ধরিমো সেটাও জানি না,আর এই তানে হামেরা ঘরও পাই না (কার সাথে যোগাযোগ করবে তা তাদের জানা নেই, এই জন্যই তারা ঘর পায় না)। হামার থাকিবার জাগা নাই আর যায় পাইছে অমেরা ঘরলা ফেলাই থুইছে (আমাদের বসবাসের জায়গা নেই, অথচ যারা পেয়েছে তারা ঘরে উঠে নি)। মহেন বাবুর স্ত্রী জানালেন হামার বাড়ির পাশত ৪টা ঘর পড়ি আছে আর মুই ঘরে পাঊ না। (তার বাড়ির পাশেই ৪টি ঘর খালি পড়ে আছে অথচ তিনি ঘর পাননি)।
উত্তর বিষ্ণুপুর মাগুরাবান,ভরা দিঘী সহ আরো কয়েক জায়গায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়। মাগুরাবানে ৬টি ঘরের মধ্যে ৩টি ঘরে উঠেনি কেউ। দুটি ঘরে তালা দিয়ে দখলে রাখলেও একটি ঘরে অপরিষ্কার ময়লায় ভর্তি। আর এই তিনটি ঘরই চলছে বিক্রির চেষ্টা। বিক্রির তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করলে মিলেছে সত্যতা। একজন তো ১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করবেন অন্যথায় অন্য কোথাও বিক্রি করবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অপর আরেক জন দরদামে সাক্ষাতে বসার কথা হলে বিক্রির সত্যতা মিলায় আর বসার প্রয়োজন হয় নি। দখলে পড়ে থাকা আশ্রয়নের ঘর তথ্য অনুসন্ধানে মিলেছে আরো ভয়ঙ্কর তথ্য। ঘর গুলো রীতিমত মাদক, জুয়া ও নারী নিয়ে ফূর্তির অভয়াশ্রম। স্থানীয় বাসিন্দারা এমন কার্যকলাপে বেশ বিব্রত ও বিরক্ত প্রকাশ করতেও শোনা যায়। অন্যান্য জায়গার ঘরগুলোর মধ্যে আরো বেশ কয়েকটিতে কোন পরিবার উঠেনি। এমন ঘরে তালা ঝুলানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
সরকারী তথ্য বাতায়ন সূত্রে বিরল উপজেলায় কয়েক ধাপে ভূমিহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় মোট মোট ৬৪৬ টি ঘর ভুমি ও গৃহহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার ৯নং মঙ্গলপুর ইউনিয়নে এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৯৩টি ঘর। মঙ্গলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল ১১টি ঘর দখল রেখে ফাকা পড়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বহ্নিশিখা আশা ভোরের জানালাকে জানান আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রির কোন সুযোগ নেই। তবে এমন কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত ও প্রমান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সার্ভে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খালি থাকা ঘর গুলোতে যারা উঠেন নি বা উঠতে চায় না। তাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে ঘর গুলোকে খালি না রেখে অন্যদের দিয়ে দেওয়া হবে।