“পুলিশ এসোসিয়েশনের হুমকি ভাষা বুঝলে যে কী হতো”!
1 min readসাঈদুর রহমান রিমনঃ
আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন যে সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছে, গণমাধ্যমের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে- সেইটা দেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক সংগঠন ও সেগুলোর কথিত ভারিক্কি মার্কার নেতারা বুঝতেই পারেন নি। তাহলে বাদ, প্রতিবাদ, মানববন্ধন চলতেই থাকতো, কষ্ট হতো তা থামাতে।
ওই নেতারা সাংবাদিককে মারধোর করা, হুমকি দেয়া, মামলার আসামী বানানোকেই কেবল “গণমাধ্যমের বিপন্নতা” বলে ভাবেন। সে ধরনের কোনো উড়ো খবর পেলেও কথিত রেজিস্টার্ড সাংবাদিক সংগঠনের তথাকথিত নেতা কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে যান মানববন্ধনে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তখন বাদ, প্রতিবাদ, বক্তৃতা, বিবৃতি আর হুমকি ধমকির বন্যায় ভাসতে থাকে।
আমি কিন্তু ভুয়া কিংবা অপসাংবাদিকতা চালানো কাউকে টিটকারী দেয়ার লক্ষ্যে কথাগুলো বলিনি। পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুমকির বিবৃতি প্রকাশের একদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উল্লেখযোগ্য ক্ষোভ, প্রতিবাদ যখন দেখতে পেলাম না, তখন সত্যি সত্যিই কয়েকজন সাংবাদিক নেতার সঙ্গে কথা বলি।
জাতীয় পর্যায়ের দাবিদার তিনটি বিশাল (!) সাংবাদিক সংগঠনের চেয়ারম্যান/ সভাপতি এবং আরো একটি সংগঠনের মহাসচিব পদবীর নেতাকে ফোন দিয়ে কোনরকম ক্ষোভ, উদ্বেগ দেখতে পাইনি। পরে নিজেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুলিশি বিবৃতি হুমকির কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু ‘একজন ছাড়া’ বাকি তিন নেতাই পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, পুলিশ নিজেদের সাফাই গাইতে বিবৃতি দিয়েছে, এখানে সাংবাদিকতা আক্রান্ত হওয়ার কি দেখলেন? দুই সাংবাদিক নেতা তো বলেই বসলেন, কিছুদিন যাবত সাংবাদিকরা আসলেই তো পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করছে, মাত্রাতিরিক্ত নেগেটিভ কাভারেজ দিচ্ছে।
আমি বললাম, নেগেটিভ কাভারেজ মানে? তাদের ভয়াবহ দুর্নীতি লুটপাটের খবর তুলে ধরছে শুধু – এটা সাংবাদিকদের অন্যায়? আমার কথা শুনেও নেতা দমে গেলেন না বরং বললেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তো বছরের পর বছর ধরে একইভাবে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট চালিয়ে আসছে, কিন্তু এ মুহূর্তেই সব কাহিনী ফাঁস করার কি হলো? পত্রিকার পুরা পাতা জুড়ে যদি সাবেক আইজিপি, সাবেক কমিশনারের ঘুষ, দুর্নীতির খবর আর তাদের সহায় সম্পদের ছবি ছাপেন, তাহলে বাকি দেশবাসীর খবর কোথায় ছাপাবেন?
আমার মেজাজ চরমে উঠলো- অশ্লীল একটা বাক্য যুক্ত করে শুধু বললাম, ,,,, ভুয়াবাজী, ধান্দাবাজি নিজে নিজেই ছেড়ে দিন, তাতে ইজ্জত সম্মান থাকতে পারে।
শুরুতে ‘একজন ছাড়া’ যে বলেছিলাম, এবার আসি তার প্রসঙ্গে। উপজেলা উপজেলায় শাখা-প্রশাখা দেয়া রেজিস্টার্ড প্রাপ্ত সাংবাদিক সংগঠনের তিনি সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কথার শুরুতেই বলছিলেন, বড় ভাই – পুলিশ এসোসিয়েশনের বিবৃতিটা দেখেছেন? কি জঘণ্য ভাবে হুমকি দেয়া হলো,,,ছি ছি ছি, সাংবাদিকদের ইজ্জত বলতে কিচ্ছু থাকলো না। এই সাংবাদিক নেতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যাপারে আপনি বা আপনার সংগঠন কি কোনো ভূমিকা রাখবে? এবার তিনি বললেন, পুলিশের হুমকি কিন্তু গণমাধ্যম মালিক ও তাদের সাংবাদিকতার নীতি নির্ধারণ নিয়ে। এখানে সাংবাদিককে কিন্তু সরাসরি আক্রমণ করা হয়নি। আক্রমণ করা হয়েছে গণমাধ্যম মালিকপক্ষ কর্তৃক পুলিশ বিরোধী খবরের উদ্দেশ্যমূলক কাভারেজ দেয়াকে। আমিতো ভাই সাংবাদিক সংগঠন করি, সাংবাদিক আক্রান্ত না হলে আমার তো আর কিছুই করার থাকে না। কথা শুনে আমার তো ভিমড়ি খাওয়ার অবস্থা। ভাবলাম, নেতার নসিব হয়তো ভালো তাই মুখোমুখি কথা হচ্ছিল না। কথা হচ্ছিল হোয়াটসঅ্যাপ কলে, মাঝ রাতে।
এই চার সাংবাদিক সংগঠন নেতাদের অনুভূতির মতোই দেশের সিংহভাগ সাংবাদিক সংগঠন ও নেতার হয়তো অভিন্ন চেতনা। অনেকে হয়তো বিবৃতির ‘ভদ্র ভাবে চরম আক্রমণের’ ভাষার সঙ্গেও পরিচিত নন। তারা যদি ভাবেন, বিবৃতিতে শালা, মাদার…, বাইন….যেহেতু বলে নাই অতএব এটা আক্রমণ নয় – তাতে তো দোষের কিছু দেখছি না। কারণ, ভাষাটাই তার কাছে দুর্বোধ্য।