ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি; ঈদের ছুটিতে দেবিদ্বারে ৪ হত্যাকাণ্ড : আটক-১

1 min read

পারভেজ সরকার:

কুমিল্লার দেবিদ্বারে ঈদের ছুটিতে (গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল) আবু সায়েম (৩৯) নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণপূর্বক নির্যাতনে হত্যা, সালিশ বিচারে সালিসদার চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে শামিম(৫০) নামে এক চা দোকানদারকে হত্যা, হাসপাতালে ঢুকে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী অক্সিজেনের সিলিন্ডার দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে শাহনাজ মিম (৪৫) নামে এক আয়াকে হত্যা এবং দীর্ঘ ২২ বছর নিখোঁজ থাকার পর পিতার সম্পদ থেকে বঞ্চিত আবুল হাসেম(৫০) নামে এক ব্যক্তির নাকে-মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে থাকা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারসহ ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ নং গুনাইঘর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা খোরশেদ আলমকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মা-মনি হাসপাতালের আয়া শাহনাজ মিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালকসহ ৪ কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাছাড়া এ সকল অভিযোগের আর কোন অগ্রগতি নেই।

এ ঘটনাগুলো গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিলে এই পাঁচ দিনে চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাজায়, গত ৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে পাওনা টাকা আদায়ের লক্ষ্যে একদল সন্ত্রাসী দিয়ে আবু সায়েম (৩৯) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও তার ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন। অপহরণের পর রাত পৌনে ২টায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলে আবু সায়েমের লাশ। এ ঘটনায় ওই সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমকে রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। নিহত সায়েম উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের চাষারপাড় গ্রামের আবদুর রহিম সরকারের ছেলে এবং দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান ভুঁইয়ার মেয়ের জামাতা।

গত ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) দিবাগত রাত ৯টায় উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামে একটি পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশ ডাকা হয়। সালিশে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের এক পর্যায়ে পার্শ্ববর্তী উজানী জোড়া খন্দকার বাড়ির মোসলেম খন্দকারের ছেলে আব্দুল আলিম খন্দকার(৪০) প্লাস্টিক ও কাঠের চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে শামীম (৫০) নামের এক চা দোকানদারকে মারাত্মক আহত করে। তাকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করলে ১৩ এপ্রিল (শনিবার) বিকেল পৌনে ৪টায় টায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শামিম উজানীকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের পুত্র, সে বাড়ির পাশে চা’ দোকানের ব্যবসা করে আসছিল।

একই দিন (১২ এপ্রিল) দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবিদ্বার সদর এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন ‘মা-মনি’ প্রাইভেট হাসপাতালে ঢুকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পিটিয়ে শাহনাজ বেগম মিম (৪৫) নামে এক আয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় মারাত্বকভাবে রক্তাক্ত ও আহত করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর আহত মিমকে মাথা ও মুখমণ্ডল থেতলানো ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, পরে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা ২টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শাহনাজ মিম (৪৫) দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের মৃত: সেকান্দর আলির মেয়ে।

অপরদিকে ১৩ এপ্রিল (শনিবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টায় উপজেলার বাগুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বস্তি থেকে আবুল হাসেম (৫০) নামের এক দোকান শ্রমিকের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নিহত আবুল হাসেম বাগুর ছৈনুদ্দি হাজী বাড়ির মৃত: আব্দুল মজিদের পুত্র। তিনি চান্দিনা বাজারে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতেন।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নয়ন মিয়া জানান, দেবিদ্বারে ৪ টি মরদেহ উদ্ধার হলেও একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, অপর ৩ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবু সায়েম হত্যা মামলায় ৪ জন নামে এবং ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়, এ মামলায় খোরশেদ আলম নামে ১ জনকে গ্রেফতার করে কোর্ট হাজতে চালান করা হয়েছে। হাসপাতালের আয়া মিম হত্যা মালায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে, অপর ঘটনায় ২ জনকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা অভিযোগ তদন্তে আছে। আমরা সকল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Developed by VJ IT.
Translate »