ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

শোকাবহ পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর!

1 min read

সংগৃহীত ছবিঃ বিডিআর বিদ্রোহ

আজিজুল ইসলাম যুবরাজঃ
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি—বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) বিদ্রোহের ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিপথগামী সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়ার নামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। ওই দুই দিনে বাহিনীর তখনকার মহাপরিচালকসহ (ডিজি) বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

ছবিঃ বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের তালিকা ও ছবি (সংগৃহীত)।

পরে সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের আলোচনা শেষে পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র, গুলি ও গ্রেনেড জমাদানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের সমাপ্তি হয়। ঘটনার জেরে আধাসামরিক বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়।

আলোচিত উক্ত ঘটনায় একসঙ্গে দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় হয়েছে। এখন অপেক্ষা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারের। প্রায় তিন বছর ধরে আপিল বিভাগে ঝুলে আছে হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৩৯ জনের বিচার।

অপরদিকে বিচারিক আদালতে এ মামলাটিতে স্বাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শেষ হয়নি। এ মামলায় ১ হাজার ৩৪৪ স্বাক্ষীর মধ্যে এই ১৫ বছরে মাত্র ২৭৬ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। যদিও আগামী ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে গতিতে মামলাটির বিচার চলছে, তাতে এর বিচার শেষ হতে প্রায় আরও এক যুগ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা তাদের। তাছাড়া মামলাটির বিচার কার্য শেষ না হওয়াতে, ৫ শতাধিক আসামীকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

২০০৯ সালে অর্থাৎ ঠিক ১৫ বছর আগের আজকের দিনে পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের কিছু বিপথগামী সদস্য। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা; এমনকি তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও শিকার হন নৃশংসতার। দুই দিনব্যাপী চলতে থাকা ওই বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। আরও নিহত হন ১৭ বেসামরিক নাগরিক।

যে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হারিয়েছিল জাতিঃ
উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হলেন– মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল বারী, কর্নেল মো. মজিবুল হক, কর্নেল মো. আনিস উজ জামান, কর্নেল মোহাম্মদ মসীউর রহমান, কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিক, কর্নেল মোহাম্মদ আখতার হোসেন, কর্নেল মো. রেজাউল কবীর, কর্নেল নাফিজ উদ্দীন আহমেদ, কর্নেল কাজী এমদাদুল হক, কর্নেল বিএম জাহিদ হোসেন, কর্নেল সামসুল আরেফিন আহাম্মেদ, কর্নেল মো. নকিবুর রহমান, কর্নেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, কর্নেল মো. শওকত ইমাম, কর্নেল মো. এমদাদুল ইসলাম, কর্নেল মো. আফতাবুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনশাদ ইবন আমিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. বদরুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এলাহী মঞ্জুর চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এনায়েতুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুছা মো. আইউব, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. লুৎফর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খান, মেজর মো. মকবুল হোসেন, মেজর মো. আব্দুস সালাম খান, মেজর হোসেন সোহেল শাহনেওয়াজ, মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেন, মেজর আহমেদ আজিজুল হাকিম, মেজর মোহাম্মদ সালেহ, শহীদ মেজর কাজী আশরাফ হোসেন, মেজর মাহমুদ হাসান, মেজর মুস্তাক মাহমুদ, মেজর মাহমুদুল হাসান, মেজর হুমায়ুন হায়দার, মেজর মো. আজহারুল ইসলাম, মেজর মো. হুমায়ুন কবীর সরকার, মেজর মো. খালিদ হোসেন, মেজর মাহবুবুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান, মেজর মোহাম্মদ মাকসুম-উল-হাকিম, মেজর এস এম মামুনুর রহমান, মেজর মো. রফিকুল ইসলাম, মেজর সৈয়দ মো. ইদ্রিস ইকবাল, মেজর আবু সৈয়দ গাযালী দস্তগীর, মেজর মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মেজর মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম সরকার, মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামান (মণি), মেজর তানভীর হায়দার নূর, ক্যাপ্টেন মো. মাজহারুল হায়দার।

মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের পরিবার ভোরের জানালাকে জানায়, ‘আমাদের মণিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার বিচার চাইতে পারি। তবে রায় ও বিচারের অপেক্ষায় আজ ১৫টি বছর পেরিয়ে গেলো। রায় কার্যকর হয় কিনা আমরা জানি না। এই নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি আমাদের সবার।’

মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামান (মণি)

আজকের কর্মসূচিঃ
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে বিজিবি ও সেনা সদর নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি বছরের মতো এবারও শহীদদের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) এবং শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সব সদস্য কালোব্যাজ পরিধান করবেন।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Newsphere by AF themes.
Translate »