ভোরের জানালা

জনগণের কল্যাণে অগ্রদূত

তাড়াশে ১২ দিন ধরে ৯ পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে গ্রাম্য পঞ্চায়েত

1 min read

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:

সমাজপতিদের কড়া নির্দেশনা এদের বাড়ি যাওয়া যাবে না। এদের সঙ্গে বসা- কথা বলা যাবে না। তাদের কাছে দোকানের কোন দ্রব্যাদি বিক্রি কিংবা কেনাকাটাও করা যাবে না। যে কথা বলবে এবং কেনাকাটা করবে সেই হবে সমাজচ্যুত। তাছাড়াও তাদের বাড়িতে কেউ শ্রম বিক্রিও করতে পারবে না। সমাজপতিদের এমন সিদ্ধান্তে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের দেওঘর গ্রামের ৯টি পরিবার ১২ দিন ধরে সমাজচ্যুত রয়েছেন । ফলে সমাজচ্যুত পরিবার গুলো নারী- পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

গত ৫ এপ্রিল সমাজপতি দেওঘর গ্রামের শামসুল হক, আব্দুল গফুর, আব্দুল মাজেদ, হাজী ইসসাইল হোসেন, কোরবান আলী, মোতালেব হোসেন, আতাউর রহমান ও জহুরুল মেম্বর শালিশী বৈঠক বসিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেন। সমাজচ্যুত ৯ টি পরিবার হলো আব্দুল মজিদ, আলা উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল আজিজ, চাঁন মিয়া, আফসার আলী, হবিবুর রহমান, সবদের আলী ও আক্তার হোসেন। সমাজচ্যুত হওয়ায় ওই পরিবারদের নিকট থেকে ঈদের নামাজের হুজুরের হাদিয়া, সিন্নীসহ ঈদের নামাজ পড়া থেকে বিরত রাখে।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দেওঘর গ্রামের মোতালেব হোসেন ও আতাউর রহমানের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল মান্নান ও তার সহদর চাঁন মিয়ার বসতঃ বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে প্রায় ১ মাস পূর্বে মোতালেব হোসেন ও আতাউর রহমান মিলে আব্দুল মান্নানের একটি আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে মান্নানকে দেখায় এবং ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে ভিডিও টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকী ও ভয়ভীতি দেখান। আব্দুল মান্নান একজন স্কুল শিক্ষক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে বসেন। কিন্তু তারা সাফ জানিয়ে দেন ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। না দিলে ভিডিওটি ভাইরাল করে চাকুরীচ্যুত করার হুমকী প্রদর্শন করেন।

এতে স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান কোন উপায়ান্ত না পেয়ে গত ১৮ মার্চ তারিখে তাড়াশ থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৮, তারিখ- ১৮/০৩/২০২৪ খ্রিঃ। পরে এ মামলায় আসামী দু’ জনকে থানা পুলিশ গ্রেফতকর করে জেল হাজতে পাঠান। এরই জের ধরে গ্রামের ওই সকল মাতব্বরগণ তাদের পক্ষ নিয়ে ওই মামলার বাদী আব্দুল মান্নান তাঁর আত্মীয় স্বজনসহ ৯ পরিবারকে একঘরে করে রাখেন। তাদের একঘরে করে রাখায় ওই ৯ পরিবারের সদস্য ও শিশুরা ১২ দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে গেলে সমাজচ্যুত হওয়া আব্দুল মজিদ বলেন, আজ প্রায় ১২ দিন হলো গ্রামের কোন লোক সমাজচ্যুত করে রাখায় আমাদের সাথে কেউ কথা বলেছে না। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতেও দিচ্ছে না। কথাও বলেন না। গ্রামের দোকানে গেলে দোকানদার তাদের কাছে কোন জিনিসপত্র বিক্রি করেন না। জমিতে বোরো ধান পেঁকে আছে কিন্তু গ্রামের কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় বিপদে আছি। এমন কি আমাদের শিশুরা স্কুলেও যেতে পারছে না। আমাদেরকে একঘরে করে রাখায় খুব কষ্টে চলতে ফিরতে হচ্ছে। ফলে আমরা ১২ দিন ধরে নিরাপত্তা হীনতায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছি।

এ ব্যাপারে গ্রাম্য পঞ্চায়েত শামসুল হক ও হাজী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত না মানায় আমরা তাদের সমাজ থেকে আলাদা করে রেখেছি।

তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক জানান, মামলার বিষয়টি জানি। কিন্তু একঘরে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খুব দ্রুতই জেনে ওই গ্রামে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কেউ আমাকে এ বিষয়ে এখনও জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, সমাজচ্যুতির বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলবো।

Please follow and like us:
স্বত্ব © ২০২৪ ভোরের জানালা | Developed by VJ IT.
Translate »